এম নুরুদ্দোজা, নিজস্ব প্রতিবেদক ::
সারা দেশের ন্যায় গ্রেফতার আতঙ্কে এখন ঘরছাড়া অবস্থায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা। ৮ ফেব্রুয়ারী দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট’ মামলার রায়কে ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে কেন্দ্র ছাড়িয়ে মহেশখালী উপজেলা বিএনপিতে। এ ছাড়া এরই মধ্যে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ তিন কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় রবিবার মহেশখালী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আমিনুল হক চৌধুরী, শাপলাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন, উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি রিয়াদ মোহাম্মদ আরাফাত, পৌর ছাত্রদল সহ-সভাপতি মোহাম্মদ রিফাত, মহেশখালী কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি মিজানুর রহমান ও পৌর যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মফিজ মিয়াকে গ্রেফতার করে মহেশখালী থানা পুলিশ।
বিস্ফরক দ্রব্য আইনে মামলায় গতকাল সোমবার আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তৃর্ণমুল বিএনপির নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, রাতে নেতাকর্মীদের বাড়ীতে পুলিশের তল্লাশি চালানোর ভয়ে অনেক নেতাকর্মীরা রাত যাপন করতেছেনা নিজ বাড়ীতে। অপরদিকে যে কোন ধরনের সহিসংসহতা ঠেকাতে মহেশখালী থানার চৌকষ ওসি প্রদীপ কুমার দাশের নেতৃত্বে পুলিশ রয়েছে হার্ডলাইনে।
উপজেলার উপ-দ্বীপ মাতারবাড়ী বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ তল্লাশি চালানোর শংকায় বিএনপির অনেক নেতাকর্মী গা ঢাকা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক হোছাইন মোঃ মাছুম। তারা গ্রেফতার আতংকে ভূগছেসহ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বেড়ে যাচ্ছে বলেও জানান।
বিএনপির দলীয় একটি সূত্রে জানা গেছে, দেশব্যাপী বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ৭৮ হাজার ৩২৩। আর আসামির সংখ্যা ৭ লাখ ৮৩ হাজার ২৩৮ জন। এ সরকারের সময়ে তাদের ৭৪৭ জন নেতা-কর্মী অপহ্নত হয়েছেন; সরাসরি ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে খুন’ হয়েছেন ৫২০ জন; ১৫৭ জন এখনো নিখোঁজ। গত দুই দিনে নতুন করে চার মামলায় ৯০০ নেতা-কর্মীকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে অজ্ঞাত আসামিই বেশি। ফলে গা ঢাকা দিয়েছেন মধ্যসারি ও নিম্নস্তরের নেতা-কর্মীরা। অনেকেই বন্ধ রেখেছেন নিজের সেলফোন। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার এড়িয়ে চলার দিক নির্দেশনা দিয়েছেন বলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
মহেশখালী উপজেলা বিএনপির আহবায়ক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন,‘সরকার পরিকল্পিতভাবে বিএনপি নেতাদের গ্রেফতার করছে। বিএনপি নেতা-কর্মীরা ৮ ফেব্রুয়ারি শান্তিপূর্ণভাবে আদালতে যেতে চায়। কিন্তু সরকার সেটা মেনে নিতে পারছে না। উদ্দেশ্য একটাই, আগামী নির্বাচনকে একতরফা করা। কিন্তু বিএনপি চেয়ারপারসনকে জেলে নিয়ে কিংবা সাজা দিয়েও বিএনপিকে দমাতে পারবে না। কোনো কারণে বেগম জিয়াকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হলে সেই নির্বাচনে বিএনপি যাবে না। ওই নির্বাচন দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্যও হবে না।
’মহেশখালী উপজেলা যুবদলের সভাপতি মোস্তাফা কামাল বলেন, ‘৮ ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে সরকার এক অশুভ পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। গণ গ্রেফতার সরকারের ভয়ঙ্কর অশুভ পরিকল্পনার অংশ। সরকার ভাবছে, গ্রেফতার করে দেশের মানুষ ও জাতীয়তাবাদী শক্তি ভয় পেয়ে যাবে, আতঙ্কগ্রস্ত হবে। এই গ্রেফতারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মহেশখালীসহ গোটা দেশ আরও বেশি ক্ষোভে-বিক্ষোভে ফেটে পড়বে।’ তিনি আরোও বলেন, মহেশখালীতে অতিতে কোন বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়নি আগামীতে হবে না।
মহেশখালীর রাজনৈতিক ইতিহাসের এ গণ-গ্রেফতার এক কালো অধ্যায় হিসেবে মাইলফলক হয়ে থাকবে। তিনি নেতাকর্মীরা হোটেলে নাস্তা করার সময় এহেতুক আটক করা হয় বলে দাবী করেন। এভাবে আটকের ফলে দেশব্যাপী গ্রেফতার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে বিএনপিতে। আটকের ঘটনার পর দুই দিন ধরে অনেক উপজেলা নেতার সঙ্গেই যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনও বন্ধ রেখেছেন অনেকে। এদিকে কয়েক দিনের তুলনায় গতকাল সকাল থেকে উপজেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনেও নেতা-কর্মীদের আনাগোনা কম ছিল।
মহেশখালী থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ জানান,৮ ফেব্রুয়ারি মহেশখালীতে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য সন্ধ্যায় বাজারের একটি গোপন কক্ষে বৈঠক করছিল মহেশখালীর বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকজন বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদল নেতা। গোয়েন্দা সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ওই স্থানে অভিযান চালিয়ে বিস্ফরকসহ তাদেরকে আটক করা হয়। গতকাল আদালতের মাধ্যমে আটককৃতদের বিস্ফরক মামলায় কারাগারে ফেরণ করা হয়েছে।
পাঠকের মতামত: